পিতার সম্পত্তি গোপনে ও অবৈধভাবে বিক্রির পর, কাকতালীয়ভাবে সৈয়দ মাহমুদুজ্জামান ফিরোজের দ্বিতীয় স্ত্রী জানতে পারেন। এখানে বলে রাখা ভাল, খালেদা রশীদ যাদের দিয়ে সম্পত্তি বিক্রির দলিল লিখিয়ে ছিলেন, তাদের সাথে টাকা-পয়সা লেনদেন নিয়ে গোলমাল হওয়ায় তারা সৈয়দ মাহমুদুজ্জামান ফিরোজের দ্বিতীয় স্ত্রী কুহেলী জামান এর কাছে বিক্রিত দলিলের নকল পৌঁছে দেন। ঐ দলিল নিয়ে কুহেলী জামান তার স্বামী সৈয়দ মাহামুদুজ্জামান ফিরোজসহ খালেদা রশীদের কাছে গেলে তিনি দলিলের বিষয়টি জানেন না বলে জানান।
মৃত্যুর তিন মাস আগে সৈয়দ মাহামুদুজ্জামন ফিরোজ স্ত্রী কুহেলী জামানকে জমি সংক্রান্ত বিষয়ে খোঁজ-খবর নেয়ার জন্য পাওয়ার অব এটর্ণি প্রদান করলে, কুহেলী জামান ইউনাইটেড গ্রুপের বিরুদ্ধে গুলশান থানায় জিডি করে তাদের সাথে যোগাযোগ করেন। ইউনাইটেড গ্রুপ জমি বিক্রয় সংক্রান্ত প্রতারণার বিষয় অবগত নয় বলে জানান। তবে সৈয়দ মাহামুদুজ্জামন ফিরোজের মৃত্যুর দিনে মানবিক কারণে ইউনাইটেড গ্রুপ কুহেলী জামানের কাছে সহায়তা হিসেবে কিছু টাকা প্রেরণ করে; যা দিয়ে কুহেলী জামান হাসপাতালে বিশাল অংকের বিল পরিশোধ করতে পেরেছিলেন। হাসপাতালে অবস্থানকালে (কোমায়- লাইফ সাপোর্ট দেয়া অবস্থায়) বোন খালেদা রশীদ ভাইয়ের অসুস্থাতার জন্য কোন প্রকারের সহানুভূতি দেখাননি বা আর্থিক সহায়তা করেননি। উল্লেখ্য সৈয়দ আবদুস সুলতানের গুলশানের সেই জমিতে এখন ইউনাইটেড গ্রুপের বহতল বিশিষ্ট বিশাল ভবন নির্মিত হচ্ছে।
এভাবেই সৈয়দ আবদুস সুলতানের একমাত্র জীবিত পুত্রের উত্তরাধীকারীদের ( দুই স্ত্রীর মোট ৬ সন্তান) পিতা ও দাদার সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করেন খালেদা রশীদ। এখানেই তিনি ক্ষ্যান্ত হননি। পরিবারের অর্থ এককভাবে আত্মসাৎ করার প্রক্রিয়া তিনি এরপরেও চালিয়ে যেতে থাকেন।
সৈয়দ আবদুস সুলতানের স্ত্রী কুলসুম সুলতান, যিনি পেশায় ছিলেন একজন আইনজীবি এবং আইন কলেজের শিক্ষক; তিনি স্বীয় স্বামীর সম্পত্তির অংশ হিসেবে পয়তাল্লিশ লক্ষ টাকার পে-অর্ডার পেয়েছিলেন; যা কিনা প্রদান করেছিলেন বর্ণিত জমির প্রথম ক্রেতা হাজী বেলাল হোসেন। সেই পে-অর্ডার মায়ের ব্যাংক একাউন্টে জমা না দিয়ে খালেদা রশীদ ইতিপূর্বে মায়ের সাথে তার করা যৌথ একাইন্টে জমা করে আত্মসাতের পথ প্রশস্থ করেন। বর্ণিত যৌথ একাউন্টটি ছিল সোনালী ব্যাংক উত্তরা শাখায়। ভাই সৈয়দ মাহামুদুজ্জামন ফিরোজের মৃত্যুর পরে কুলখানির দিন খালেদা রশীদ মায়ের অংশের টাকা যৌথ একাউন্টে জমা দেবার বিষয়টি অস্বীকার করে জানান যে, মায়ের অংশের টাকা তখনও পাওয়া যায়নি। পাওয়া গেলে কুলখানীতে তিনি খরচের অংশ দিতে পারতেন।
পরে কুহেলী জামান সোনালী ব্যাংক উত্তরা শাখায় যোগাযোগ করে জানতে পারেন, খালেদা রশীদ বর্ণিত একাউন্ট থেকে ৪২ লক্ষ টাকা একক স্বাক্ষরে তুলে নিয়েছেন; অথচ ততদিনে যৌথ স্বাক্ষর প্রদানকারীর অন্যজন, তার মা গত হয়েছেন। এই টাকার অংশ নিয়মানুসারে সৈয়দ মাহামুদুজ্জামন ফিরোজ এর পাওয়ার কথা। তার মৃত্যুর পর ঐ টাকার আইনত অংশীদার সৈয়দ মাহামুদুজ্জামন ফিরোজ এর দুই সংসারের ছয় সন্তান। খালেদা রশীদ সকলকেই বঞ্চিত করে এককভাবে পুরো টাকা আত্মসাৎ করেন। এখানেই শেষ নয়,২০০৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ছোট ভাই সৈয়দ আহমেদুজ্জামান ইকবালের মৃত্যুর পর মায়ের দেখাশোনার নাম করে মায়ের অনিচ্ছা সত্ত্বেও জোর করে ডাক্তার দেখানোর নামে ভাড়াটে ফ্ল্যাট থেকে নিজের বাড়িতে নিয়ে আসেন খালেদা রশীদ। সে সময়ে খালেদা রশীদ তার মায়ের ফ্ল্যাটের যাবতীয় আসবাবপত্র ও স্বর্ণালঙ্কার খালেদা রশীদ কাউকে না জানিয়ে এককভাবে নিয়ে যান।
সম্প্রতি জানা গেছে, সৈয়দ আবদুস সুলতানের স্ত্রী কুলসুম সুলতানের পৈত্রিক সম্পত্তি (যা ময়মনসিংহ শহরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত), যার আইনত অংশীদার সৈয়দ মাহামুদুজ্জামন ফিরোজ এর দুই সংসারের ছয় সন্তান এবং খালেদা রশীদ; সেটিও খালেদা রশীদ এককভাবে দখল করে আত্মসাৎ করার পাঁয়তারা করছেন। খালেদা রশীদ পিতার সম্পত্তি বিক্রির টাকা এবং মায়ের টাকা এককভাবে আত্মসাৎ করে গাজীপুরের বোর্ড বাজারে ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজীর কাছাকাছি জায়গায় খালেদা রশীদ এডুকেয়ার নামে একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন বলে জানা গেছে।
সৈয়দ আবদুস সুলতানের পুত্র সৈয়দ মাহামুদুজ্জামন ফিরোজ এর প্রথম স্ত্রী ডা. হোসনে আরা শিরিন গত রমাজান মাসে অসুস্থ অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছেন। তার দুই পুত্র বর্তমানে ইংল্যান্ড ও মালয়েশিয়ায় বসবাস করেন। একমাত্র কন্যা পুরান ঢাকায় স্বামী-সন্তানসহ বাস করছেন। সৈয়দ মাহামুদুজ্জামন ফিরোজ এর দ্বিতীয় স্ত্রী কুহেলী জামান, যার কাছেই সৈয়দ মাহামুদুজ্জামন ফিরোজ জীবনের শেষ দিনগুলিতে কাটিয়েছেন এবং তার কাছে মৃত্যুবরণ করেছেন; তিনি দুই পুত্র ও এক কন্যা নিয়ে ২০০৩ সাল থেকে পিতার আশ্রয়ে রয়েছেন (স্বামীও আমৃত্যু সেখানেই ছিলেন)। অর্থাভাবে ছেলে-মেয়েদের লেখা-পড়া ও ভরণ-পোশন করতে তাঁর জীবন ওষ্ঠাগত। পিতা-পিতামহ ও পিতামহীর সম্পত্তির ওয়ারিশ সূত্রে যে অংশের দাবীদার, যাতে করে কুহেলী জামান এর সন্তানগণ, সেইটুকু পেতে পারে; সে জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতা কামনা করেছেন সৈয়দ মাহামুদুজ্জামন ফিরোজ এর দ্বিতীয় স্ত্রী কুহেলী জামান।
Filed under: প্রথম পৃষ্ঠা | Leave a comment »